সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকতে সম্প্রতি এক বিরল প্রাকৃতিক দৃশ্য ধরা দিয়েছে। ভোরের আলোয় গোটা সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য সাদা ঝিনুক, যা দূর থেকে দেখতে মনে হচ্ছে যেন সমুদ্রতটে বিছানো এক বিশাল গালিচা। এই অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন ভিড় করছেন শত শত ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটার প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের নানা স্থানে ঝিনুক ও শামুক ছড়িয়ে রয়েছে। বিশেষ করে জিরো পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় পয়েন্ট গঙ্গামতী পর্যন্ত পথেই এই দৃশ্য সবচেয়ে বেশি নজরে আসছে। তবে সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভাটার সময় সৈকতে যেতে হবে, কারণ জোয়ারে সমুদ্রের পানি পুরো সৈকত ঢেকে ফেলে।
স্থানীয় জেলে সবুজ মিয়া জানান, জোয়ারের সময় ঢেউয়ের সঙ্গে এসব ঝিনুক ও শামুক তীরে ভেসে আসে এবং ভাটার পর ছড়িয়ে থাকে। এ ধরনের দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। পর্যটকরা মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করছেন, যা কুয়াকাটার পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
সাতক্ষীরা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক জহির উদ্দিন বলেন, “এমন সৌন্দর্য আগে কখনো দেখিনি। চারদিকে ঝিনুকের গালিচা দেখে মনে হচ্ছে যেন রূপকথার কোনো সমুদ্রসৈকতে এসে পড়েছি।” তিনি আরও বলেন, এই দৃশ্য যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে কুয়াকাটার আকর্ষণ বহুগুণ বাড়বে।
টোয়াক সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুশার বলেন, ঝিনুকের এ সৌন্দর্য কুয়াকাটার পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও বাড়বে। তবে তিনি সতর্ক করেন, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ঝিনুক সংগ্রহ যেন কেউ না করে সে বিষয়ে প্রশাসনকে নজর দিতে হবে।
উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, বহু বছর ধরে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। তিনি আশ্বাস দেন, এ সৌন্দর্য সংরক্ষণে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় তাদের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।