মুস্তাফিজুর রহমান কখনোই ক্যামেরার সামনে আসে না; বরং তা এড়িয়েই ভালোবাসেন। মুখের সামনে মাইক্রোফোন তার কাছে যেন অ্যালার্জির মতো। ভিড়ের মধ্যে পরিচিত মুখ দেখলে চোখের ইশারায় সাড়া দেন, আর বাকিটা নীরবে। আজও, ১০ বছর পরও, মুস্তাফিজুর সেই লাজুকতা ও সংযমে ছাপ স্পষ্ট। তিনি সুকৌশলে কাছে ভিড়তে দেননি, যেমন আবুধাবি থেকে দুবাই যাওয়ার সময় বাসে উঠে ক্যামেরার ভিড় এড়িয়ে চলেছিলেন।
মাঠে মুস্তাফিজুর পারফরম্যান্সও তার নিঃশব্দ প্রকৃতির মতো। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে নাসুম আহমেদ ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতলেও, মুস্তাফিজুর নাম আলোচনায় আসেনি। কিন্তু তিনি ছিলেন জয়ের মূল চরিত্র—মোহাম্মদ নবিকে আউট করেছেন, রশিদ খানকে ফাঁদে ফেলেছেন এবং গজনফাকে ক্যাচ ধরতে বাধ্য করেছেন। ২৮ রান খরচে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে এই ম্যাচে তিনি নীরবে একটি রেকর্ডও স্থাপন করেছেন।
মুস্তাফিজুর ১১৬ টি২০ ম্যাচে এখন দেশের হয়ে ১৪৬ উইকেট শিকার করেছেন, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মাত্র তিন উইকেট নিয়ে তিনি শীর্ষে থাকা সাকিব আল হাসানকে ছুঁতে পারবেন। এছাড়াও, দেশের জেতা ম্যাচে তিনি ১০০ উইকেটই নিয়েছেন—এটাই দেখায় তিনি জয়ের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দলের অভিজ্ঞতম খেলোয়াড় হিসেবেও মুস্তাফিজুর অবদান অসামান্য। আইপিএলসহ আন্তর্জাতিক সব বড় ব্যাটারকে আউট করার স্মৃতি তার আছে। ড্রেসিংরুমে তার অভিজ্ঞতা সম্মান পায়, এবং গুরুত্বপূর্ণ ওভারগুলোও তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। আফগানদের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে ও ডেথ ওভারে এই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে।
অনেকে অপবাদ দেয়, বিদেশে তার পারফরম্যান্স কম। তবে আফগান ম্যাচে সে রেকর্ড ভেঙে দেশের মাটির বাইরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন—৬৫ ইনিংসে ৮৩ উইকেট তুলেছেন, যেখানে সাকিবের ৭৪ ইনিংসে ৮০ উইকেট।
মুস্তাফিজুর রহমান নীরবে, নিঃশব্দে, নিজের মতো গুছিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। তার জন্য গল্প লেখা হোক বা প্রশংসা, সবকিছু তার কাছে গুরত্বপূর্ণ নয়। তবে তার খেলার গল্প নিজেই লিখে ফেলেন—মাঠের নীরব নায়ক হিসেবে।