পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ পঞ্চদশ শতাব্দীর সুলতানি স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। সুলতান রুকুন উদ্দিন বারবক শাহের (১৪৫৯–১৪৭৬) শাসনামলে ১৪৬৫ সালে খান-ই-মোয়াজ্জম উজিয়াল খান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের নামানুসারে পুরো গ্রাম ও ইউনিয়নের নামকরণ হয়েছে ‘মজিদবাড়িয়া’।
মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪৯ ফুট এবং প্রস্থে ৩৫ ফুট, পূর্ব দিকে ২১.৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। মূল কক্ষ বর্গাকৃতির, যার প্রতিটি বাহু ২১.৫ ফুট। দেয়াল প্রায় ৬.৫ ফুট পুরু। মসজিদে তিনটি পূর্ব দরজা, চারটি করে উত্তর ও দক্ষিণ দরজা এবং পশ্চিম দেওয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে, যার মধ্যে মাঝেরটি বড়। মূল কক্ষের উপর বিশাল অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজ এবং বারান্দার ছাদ চৌচালা ঘরের আদলে নির্মিত। প্রধান কক্ষের চার কোনায় চারটি, বারান্দার দুই কোনায় দুটি মিনার আছে।
দীর্ঘদিন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় মসজিদটি একসময় জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছিল। ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে জঙ্গল পরিষ্কারের সময় এটি পুনরাবিষ্কৃত হয়। মসজিদের পাশে রয়েছে বিশাল দীঘি ও বাঁধানো ঘাট, যেখানে মুসল্লিরা অজু করে নামাজ আদায় করেন। এছাড়া একটি গভীর নলকূপ আছে, যা বর্তমানে প্রায় অচল।
প্রতিবছর বাংলা ৩০ কার্তিকে মসজিদ চত্বরে আয়োজিত হয় বাৎসরিক মাহফিল, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মুসলমান অংশ নেন। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে মসজিদের চারপাশে আগাছা জমে আছে, ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং বর্ষাকালে পানি পড়ে নামাজে অসুবিধা তৈরি করছে। বিশ্রামাগার দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়নি। দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার কোনো সুব্যবস্থা নেই।
মসজিদসংলগ্ন দীঘি সংস্কার করে মাছ চাষ করা, রাস্তা পাকা করা, মহিলাদের জন্য পৃথক ঘাট, নতুন নলকূপ স্থাপন ও ছাদ মেরামত করা হলে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ আরও সহজ হবে।
মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ কেবল একটি প্রাচীন স্থাপত্য নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের উজ্জ্বল সাক্ষী। যথাযথ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত রাখা জরুরি।