গত বুধবার পাকিস্তান ও সৌদি আরব একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে এক দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রিয়াদে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা। আল জাজিরা জানিয়েছে, এটি এমন একটি সময়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে যখন গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলা ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আক্রমণের ফলে আঞ্চলিক রাজনীতির ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে। কাতারে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের সঙ্গে মে মাসে সংঘাতের পর পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা চুক্তিতে পৌঁছেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চুক্তির প্রভাব মূল্যায়ন করছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সাওয়াল জানিয়েছেন, বিষয়টি ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার দৃষ্টিকোণ থেকে খতিয়ে দেখা হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো আসফানদিয়ার মির এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক মোড় হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলেও সেগুলো ১৯৭০-এর দশকে ভেঙে যায়। চীনের সঙ্গে যদিও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রয়েছে, তবে আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ ফয়সাল মনে করছেন, এই চুক্তি পাকিস্তানের জন্য একটি ‘টেমপ্লেট’ হিসেবে কাজ করতে পারে, যা ভবিষ্যতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিস্তারে সাহায্য করবে। এছাড়া যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন এবং সৌদিতে পাকিস্তানি সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সংকটে থাকায় সৌদির ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ভারতও ক্রমশ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করছে। স্টিমসন সেন্টারের ফেলো আসফানদিয়ার মির বলেছেন, ভারত চায় সৌদি আরব পাকিস্তান থেকে দূরে থাকুক। তবে বুধবারের চুক্তি দেখিয়েছে সৌদি আরব পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে জটিল করতে পারে।