হজরত মুহাম্মদ ﷺ এর জন্মদিনকে বিশ্বের বহু মুসলিম দেশ ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে। তবে এ বিষয়ে আলেম ও ফকীহদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতপার্থক্য বিদ্যমান। তাদের মতে, বর্তমান সময়ে ১২ রবিউল আউয়ালকে মহানবী ﷺ এর জন্মদিন বা আগমন দিবস হিসেবে উদযাপন করা সুন্নাহর পরিপন্থী এবং তারা একে বিদআত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ কখনো নির্দিষ্ট তারিখে নিজের জন্মদিন পালন করেননি। বরং তিনি প্রতি সোমবার নফল রোজা রাখতেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন—এদিন আমার জন্ম হয়েছে, তাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ আমি সিয়াম পালন করি। সহিহ মুসলিমে আবু কাতাদা রা. থেকে এ বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে (হাদিস নং: ১১৬২)।
হাদিসের ভিত্তিতে আলেমরা নবীজির জন্মদিন পালনের প্রচলিত পদ্ধতিকে বিদআত বলেছেন। তাছাড়া, তাঁর জন্মতারিখ নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। তাদের অভিমতগুলো নিম্নরূপ—
১. অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, নবীজির সুনির্দিষ্ট জন্মতারিখ জানা যায়নি, কেবল জানা যায় তিনি সোমবারে জন্মগ্রহণ করেছেন।
২. কেউ বলেন, তিনি মহররম মাসে জন্মেছেন।
৩. আবার কারো মতে, তাঁর জন্ম সফর মাসে।
৪. আরেক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হয়েছে, নবীজির জন্ম ২ রবিউল আউয়াল। দ্বিতীয় হিজরী শতকের ইতিহাসবিদ আবু মা‘শার এই মত গ্রহণ করেছেন।
৫. অনেকের মতে, জন্মতারিখ ৮ রবিউল আউয়াল। ইবনে আব্বাস ও জুবাইর ইবনে মুতইম রা. থেকে এই মত বর্ণিত হয়েছে। কাসতাল্লানী ও অধিকাংশ মুহাদ্দিস এটিকেই গ্রহণ করেছেন।
৬. অপর একদল গবেষক মনে করেন, জন্মতারিখ ছিল ১০ রবিউল আউয়াল। ইমাম বাকের, আমির আশ-শা‘বী ও ঐতিহাসিক ওয়াকেদী এ মতের সমর্থক।
৭. বহুল প্রচলিত মত হলো ১২ রবিউল আউয়াল। ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক এ মত প্রদান করেছেন। তবে তিনি কোনো সনদ উল্লেখ করেননি বলে অনেক গবেষক এটিকে দুর্বল বলেছেন।
৮. আরও একটি মত হলো ১৭ রবিউল আউয়াল।
৯. অন্যদের মতে, জন্ম হয়েছে ২২ রবিউল আউয়াল।
১০. কারো মতে, জন্ম মাস রবিউস সানি।
১১. কেউ কেউ বলেন, তিনি রজব মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন।
১২. তৃতীয় হিজরী শতকের ঐতিহাসিক যুবাইর ইবনে বাক্কার মত দিয়েছেন, নবীজির জন্ম রমজান মাসে। তার যুক্তি—যেহেতু ৪০ বছর বয়সে রমজান মাসেই তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন, তাই তাঁর জন্মও রমজান মাসে হয়ে থাকতে পারে।
অতএব, মহানবী ﷺ এর জন্মতারিখ ও জন্মদিন পালনের প্রশ্নে আলেম-ঐতিহাসিকদের মধ্যে সুস্পষ্ট মতভেদ বিদ্যমান।