নানা ঘটনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের দীর্ঘ যাত্রা। ৩৩ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় ১০ম জাকসু নির্বাচন। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের আগের রাত থেকে গণনা চলাকালীন পরিস্থিতি নাটকীয় হয়ে ওঠে, যা বিশৃঙ্খলা, ক্ষোভ এবং শোকের সৃষ্টি করে। নির্বাচনে দুইটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের শঙ্কা ছিল।
ছাত্রদল ভোট বর্জন করে অভিযোগ তুলেছে, ভোটগ্রহণে অনিয়ম, জাল ভোট, নকল ব্যালট এবং শিবির সমর্থিত প্রার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কারণে।
নির্বাচনের মধ্যে একটি শোকাবহ ঘটনা ঘটেছে, যখন চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জন্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে মারা যান। তিনি শুক্রবার সকালে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গণনা তদারকি করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুর ঘোষণা করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক সুলতানা আখতার অভিযোগ করেন, ভোট গণনায় মেশিনের বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতি গ্রহণের কারণে বিলম্ব সৃষ্টি হয়, যা কর্মকর্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহত শিক্ষকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ভোট গণনায় বিলম্বের কারণে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নির্বাচনে তিনটি প্যানেলের প্রার্থীরা কমিশনকে আলটিমেটাম দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২১টি আবাসিক হলের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের ১০টি হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনও প্রার্থী ছিল না, ৬৭টিতে একক প্রার্থী থাকায় মাত্র ২৪টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
ভোট গণনার মধ্যেই অভিযোগ না মেটানো ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় জাকসু নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য পদত্যাগ করেন। শুক্রবার রাতে অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার এবং শনিবার দুপুরে অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
অবশেষে, ৩ দিনের বিলম্বের পর আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান।