সরকার নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল বন্ধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলাগুলোর চার্জশিট দ্রুত দাখিল করা হবে এবং গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করার জন্য প্রসিকিউশিন বিভাগকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর সংঘবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই ছোট ছোট ঝটিকা মিছিল করছে। তবে মিছিলে উপস্থিতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয়। রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন এলাকায়ও চার থেকে পাঁচ মিনিটের মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত শনিবার কুমিল্লার চান্দিনা মহাসড়কে ১৫-২০ জন, এবং রোববার ঢাকার পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল করেছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটর ও গুলশান, পরদিন ধানমন্ডি এলাকায় মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দলটির কার্যক্রম নজরে এসেছে। আগস্ট মাসে গুলিস্তান ও নারায়ণগঞ্জে মিছিল করা হয়েছে, যেখানে উপস্থিতি সাধারণত ১৫ থেকে ৬০ জনের বেশি হয়নি।
নিরাপত্তা সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের একটি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার উসকানিতে সম্প্রতি কিছু বড় মিছিল বের হয়েছে। তবে ওই নেতার নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো পরামর্শ দিয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের দুটি বড় দলের মধ্যে বিরোধকে কাজে লাগিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীরা মাঠে নামতে না পারে।
মাভাবিপ্রবির ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ওমর ফারুক বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য এ বিষয়ে দায়ী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে এবং দলগুলোকে আওয়ামী লীগসহ ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের বিষয়ে একত্রে অবস্থান নিতে হবে।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, ঝটিকা মিছিল বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডিবি পুলিশ দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ঝটিকা মিছিলকারীদের গ্রেপ্তার করছে। রাজধানী ছাড়া অন্যান্য এলাকায়ও একই তৎপরতা দেখানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম শানতু বলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে এবং কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক এএইচএম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শন করতে হবে, যাতে ঝটিকা মিছিল এবং অন্য অনৈতিক কার্যক্রমের কোনো সুযোগ না থাকে।