চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন সেবা খাতে মাশুল (ট্যারিফ) বাড়িয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রায় চার দশক পর রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতেই এ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়, যা সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তি চাপ তৈরি হবে।
সবমিলিয়ে এবার গড়ে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এতটা হারে ট্যারিফ বৃদ্ধি উদ্বেগজনক।
চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাত থেকে মাশুল আদায় করা হয়। এর মধ্যে ২৩টি খাতে সরাসরি বাড়তি ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভাড়া, টোল, রেইল, ফি ও মাশুল সব ক্ষেত্রেই নতুন তফসিল চালু হয়েছে। ডলারপ্রতি বিনিময়মূল্য ধরা হয়েছে ১২২ টাকা; ফলে ডলারের মান বাড়লে মাশুলও সমান হারে বাড়বে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কনটেইনার পরিবহনে। আগে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারে ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা মাশুল লাগত, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা—অর্থাৎ গড়ে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি। এছাড়া কনটেইনারবাহী জাহাজে আমদানি কনটেইনারের জন্য ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কনটেইনারের জন্য ৩ হাজার ৪৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার খরচও প্রায় তিন হাজার টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি পণ্যে মাশুল আগের ১ টাকা ২৮ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৭৫ পয়সা। সব মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৪১ শতাংশ।
এর আগে সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। প্রায় ৪০ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার আবারও ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, “এই সময়ে ট্যারিফ বাড়ানো উচিত হয়নি। আমরা প্রস্তাবের সময়ই বলেছিলাম বাড়ালেও যেন ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এখন ৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ কার্যকর হওয়ায় এর চাপ সরাসরি ভোক্তার ওপর পড়বে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, “ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। গড়ে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বেড়েছে। তবে বন্দরের সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেটের কাজ চলায় পুরোপুরি আদায় শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে।”
দেশের মোট সমুদ্র বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার পরিবহনের ৯৮ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মাশুল বেড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে।