Tuesday, September 16, 2025
spot_imgspot_img
Homeঅন্যান্য“সমষ্টিগত সুস্থতার নতুন ধারণা: ভালো থাকলেই সম্ভব উন্নত সেবা”

“সমষ্টিগত সুস্থতার নতুন ধারণা: ভালো থাকলেই সম্ভব উন্নত সেবা”

ভালো থাকা শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়; এটি সমষ্টিগত সক্ষমতারও ভিত্তি। যারা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান—শিক্ষক, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সম্মুখসারির মানবিক সহায়তাকর্মী ও দমকলকর্মীরা—তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক ভালো থাকা প্রায়ই অবহেলিত থাকে। অথচ তারা ভালো থাকলে শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষা পাবে, রোগী সঠিক চিকিৎসা পাবে, এবং দুর্যোগে নাগরিকরা নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই পেশাজীবীরা মানসিক চাপে থাকেন।

এই প্রেক্ষাপটে, ওয়েলবিং ইকোসিস্টেম বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে: “ভালো থাকলেই ভালো কাজ সম্ভব।” ব্যক্তিগত সুস্থতাকে প্রতিষ্ঠান ও নীতিগত পর্যায়ে অগ্রাধিকার দিলে কর্মীদের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে, আর সমাজ উন্নত সেবা পাবে। উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যেই শিক্ষক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং ওয়েলবিং নীতি প্রণয়নকে বাধ্যতামূলক করেছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের পদক্ষেপ এখন জরুরি।

কারণ যারা নেতৃত্ব ও সেবা প্রদান করেন, তাদের ভালো থাকার নিশ্চয়তা না থাকলে পুরো সমাজই বঞ্চিত হয়। সমষ্টিগত সুস্থতার জন্য রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গুরুত্ব মূলত ২০১৪ সালে শুরু হলেও, ‘ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন’ ২০১৫ সালে এই আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ‘মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড’ কর্মসূচির বাংলাদেশে একমাত্র লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। আইডব্লিউএফ-এর দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন কার্যকর হয়, যা দেশে যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।

আইডব্লিউএফ-এর নেতৃত্বে নেটওয়ার্কটি সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম চালায় এবং শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের চাপ, উদ্বেগ বা বিষণ্নতার প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। এছাড়া সামাজিক ও করপোরেট খাতে চেঞ্জমেকারদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য ও ওয়েলবিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যা কর্মক্ষেত্রে চাপ মোকাবিলা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুস্থ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।

ওয়েলবিং ইকোসিস্টেম নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ শুধু আধুনিক দিক নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভালো থাকার অবদানকেও গুরুত্ব দেয়।

বাস্তবতা হলো, দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অভাব ও সামাজিক কুসংস্কারজনিত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। প্রতি লাখ মানুষের জন্য মনোরোগ চিকিৎসকের সংখ্যা একেরও কম। অধিকাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য ও ওয়েলবিং সেবা নিতে উৎসাহিত নয়। তাই সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন নেতৃত্বে ওয়েলবিং ইকোসিস্টেম বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক সামাজিক চেঞ্জমেকারদের সুস্থতা এবং সমষ্টিগত ভালো থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। অন্যের সুস্থতার জন্য কাজ করতে হলে তাদের নিজস্ব মানসিক সুস্থতা ও সামগ্রিক ভালো থাকা অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments