রাজধানীর একটি হাসপাতালে সদ্যজাত সন্তান জন্মের কয়েকদিনের মধ্যে মারাত্মক ছত্রাক সংক্রমণে প্রাণ হারান। মায়ের অসুস্থতার কারণে নবজাতক কিছু দিন হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই সংক্রমণ ঘটে। চিকিৎসকরা নানা প্রচেষ্টার পরও বাঁচাতে পারেননি, কারণ শয্যায় থাকা রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা আগে থেকে অজানা ছিল। দেশে এই ধরনের সংক্রমণ শনাক্তকরণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) প্রথমবারের মতো ঢাকার দুটি টারশিয়ারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (ICU) ছত্রাক সংক্রমণের উপর নজরদারি চালাচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে ৯৯২ জন রোগীকে সংবেদনশীল কেস হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নবজাতক, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের মধ্যে প্রাণহানিকর ছত্রাক সংক্রমণ ঘটছে।
গবেষণায় ক্যান্ডিডা অরিস ও ক্যান্ডিডা ব্ল্যাঙ্কি নামে ছত্রাকগুলো ওষুধ প্রতিরোধী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ফ্লুকোনাজোল ও ভোরিকোনাজোলের মতো সাধারণ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ কার্যকরতা হারাচ্ছে, তবে ক্যাসপোফাঙ্গিন ও মাইকাফাঙ্গিন কিছুটা কার্যকর। এগুলো ব্যয়বহুল এবং সহজলভ্য নয়।
দেশে ছত্রাক সংক্রমণে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি অ্যাসপারগিলোসিসে আক্রান্ত হন, ৯০ হাজারের বেশি অ্যালার্জিক ব্রঙ্কপালমোনারি অ্যাসপারগিলোসিসে সংক্রমিত হন। এছাড়া আক্রমণাত্মক অ্যাসপারগিলোসিসে ৫ হাজারের বেশি রোগী আক্রান্ত হন। দেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ক্যান্ডিডা ব্ল্যাঙ্কির মাধ্যমে ঘটে।
বিশ্বব্যাপী ছত্রাক সংক্রমণও মারাত্মক: প্রতি বছর ৬৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৩৮ লাখের মৃত্যু হয়। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল প্রমাণের ভিত্তিতে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর ড. তানজির আহমেদ শুভ বলেন, “আগে দেশে ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে কোনো পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি। এখন দেখা গেছে, সাধারণ ওষুধ দিয়ে অনেক ছত্রাক প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে, না হলে মারাত্মক আকার নেবে।”
ছত্রাক হল বহুকোষী অণুজীব, যা মানুষের দেহে পৃষ্ঠস্থ সংক্রমণ থেকে শুরু করে সিস্টেমিক সংক্রমণ, ক্রিপ্টোকক্কাল মেনিনজাইটিস, দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি অ্যাসপারগিলোসিস, নিউমোসিস্টিস নিউমোনিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে।