Monday, October 6, 2025
spot_imgspot_img
Homeরাজনীতিবাংলাদেশের নির্বাচনে জামায়াত ইস্যুতে দ্বিধায় দিল্লি

বাংলাদেশের নির্বাচনে জামায়াত ইস্যুতে দ্বিধায় দিল্লি

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই দেশে নির্বাচনি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা এখন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নিতে জামায়াতে ইসলামী প্রায় সব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বিএনপিও তাদের প্রার্থী নির্বাচনের জন্য মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে প্রশ্ন উঠছে—বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের বাড়তি প্রভাবকে ভারত কীভাবে দেখবে?

দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দৃষ্টিতে জামায়াত ছিল একধরনের রাজনৈতিকভাবে অস্পৃশ্য দল। এমনকি বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেও দিল্লি অনেক সময় দূরত্ব বজায় রেখেছে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, জামায়াত ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের সাফল্যও নজরে এসেছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেকে এখন জামায়াতকে ‘জামায়াত ২.০’ আখ্যা দিচ্ছেন।

পর্যবেক্ষক শ্রীরাধা দত্ত উল্লেখ করেন, জামায়াতের নতুন প্রজন্মের নেতারা আধুনিক পোশাকে টেলিভিশন টকশোতে হাজির হচ্ছেন এবং ভিন্নধর্মী মতামত দিচ্ছেন। সম্প্রতি ঢাকা সফরে তিনি জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রশ্ন করেছিলেন—ক্ষমতায় গেলে তারা কি শরিয়া আইন চালু করবেন? উত্তরে তাহের জানান, জামায়াত কখনোই এ ধরনের ঘোষণা দেয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাহের বলেন, অতীতের নেতৃত্বের ভুলের জন্য তারা ক্ষমা চেয়েছেন এবং তা স্বীকারও করেছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেও জামায়াত আগ্রহী বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে শেখ মুজিবুর রহমান নিজের কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, তবে ভারত যে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী, তা তারা মানতে প্রস্তুত।

এমনকি অতীতে ভারতবিরোধী নানা ঘটনার সঙ্গেও জামায়াতের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে শ্রীরাধা দত্তের মতে, জামায়াত এখন “চার্ম অফেনসিভ”-এর কৌশল নিচ্ছে—কথাবার্তায় আকৃষ্ট করছে, কিন্তু তাদের বাস্তব কার্যক্রম ভিন্ন হতে পারে। তাই ভারতকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

অন্যদিকে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ভিন্নমত পোষণ করেন। তার মতে, জামায়াত তাদের অতীতের চরিত্র কখনোই পাল্টাতে পারবে না। তিনি মনে করিয়ে দেন, মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার দায় জামায়াত এড়াতে পারে না। শ্রিংলার ভাষায়—“চিতাবাঘ যেমন ডোরা বদলায় না, জামায়াতও তেমন বদলাবে না।”

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত ইস্যু ভারতের জন্য এক জটিল সংকট তৈরি করেছে। দিল্লি এখন দ্বিধায় পড়েছে—তাদের নতুন রূপকে গুরুত্ব দেবে, নাকি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments