বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। দলের নাম, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র এবং মূল নেতৃত্বের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে দলটি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নির্ধারণে প্রায় দেড়শ সদস্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন এবং দেশের দুই ডজন সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করছেন।
নতুন দলটির ঘোষণা ২০ অথবা ২২ ফেব্রুয়ারি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দলের প্রধান হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম আলোচনায় রয়েছে, তবে এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। প্রথমে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দল গঠন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটিতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০ জন সদস্য থাকতে পারেন, তবে পরবর্তীতে তাদের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে।
দলটির সদস্য সচিব হিসেবে কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে, যার মধ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আলী আহসান জোনায়েদ, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আব্দুল হান্নান মাসুদ, সামান্তা শারমিন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
দলের নাম এবং প্রতীক নির্ধারণের জন্য দেশের জনগণের মতামতও চাওয়া হয়েছে। অনলাইনে ফরমের মাধ্যমে জনগণের চিন্তা, পরামর্শ এবং প্রত্যাশা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং ঘোষণাপত্র তৈরি করতেও দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এছাড়া দলের গঠনে দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং তারা উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হতে পারেন। রাজনৈতিক দলের গঠন কার্যক্রমের তদারকি করতে একটি অঘোষিত টিম কাজ করছে, যার সদস্যরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন। দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন এবং ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে, তবে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা মনে করেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। এর মাধ্যমে সংগঠনটির শক্তি প্রদর্শন করা হবে এবং নির্বাচনী মাঠে কার্যক্রম চালানো হবে। দলের সদস্যরা সারা দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি পালন করবে।
সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মার্চের শুরুতেই দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। দলের ঘোষণার পর ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভা এবং অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। নতুন দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায় এবং সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে আগ্রহী।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি এবং তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা এই সংগঠনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, জনগণের সমর্থন এবং সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তারা এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।