ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বর্তমানে এক আতঙ্কের জায়গায় পরিণত হয়েছে। একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটায়, এই সড়ক এখন যাত্রী এবং চালকদের জন্য একটি বিপজ্জনক স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনে-রাতে যাত্রীরা এবং চালকরা অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসী, রাজধানীতে আসা ব্যবসায়ী, গাড়িচালক এবং স্থানীয় শ্রমিকরা মূলত এই ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাকাতির শিকার ব্যক্তিরা ‘ঝামেলা এড়ানোর জন্য’ পুলিশে মামলা করতে চান না, যার ফলে অনেক ঘটনা পুলিশের খাতায় সেভাবে উঠে আসে না।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে এই সড়কে অন্তত ১০০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০% মামলা হয়নি। অনেক সময় পুলিশ এসব ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করে দায় শেষ করেছে। এমনকি কিছু ঘটনা ঘটেছে যেখানে ডাকাতরা আইনি সুরক্ষা লাভ করে আবারও ডাকাতি করতে ফিরে এসেছে। সড়কের ধারপাশে কিছু দোকানপাটেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যেমন গত ৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার একটি দোকানে ডাকাতি হয়, যেখানে প্রকাশ্যে গুলি চালানো হয় এবং একটি ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার এবং কুমিল্লা অঞ্চলের কিছু অংশে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। বিশেষত, রাতে যানজটের সময় ডাকাতেরা হামলা চালিয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়। সড়কটিতে গাড়ির গতিবিধি ধীর হলে ডাকাতরা দ্রুত হামলা চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেড় থেকে দুই মিনিটে তারা ডাকাতি শেষ করে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, সড়কে চলাচলকারী চালকদের জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ডাকাতরা যখন যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়ার সময় চালকদেরও অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছে, যা চালকদের জন্য অতিরিক্ত আইনি ঝামেলা সৃষ্টি করছে। হাইওয়ে পুলিশ এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে টহল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে, তবে পুলিশ জানায়, রাতে সড়কে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা পুলিশকে না জানিয়ে চুপ থাকে।
এই মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার পরেও ডাকাতি থামানো সম্ভব হয়নি, ফলে যাত্রীদের জন্য এই সড়ক এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।