বাংলাদেশে এক সময় ‘সাদা সোনা’ হিসেবে পরিচিত চিংড়ি বাণিজ্য এখন নানা সংকটের মুখে পড়েছে। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে, এবং রপ্তানি এক সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একাধিক কারণে চিংড়ি শিল্প বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে, যার মধ্যে কাঁচামালের অভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং বাজারের পরিস্থিতির পরিবর্তন অন্যতম। ১৯৯০ এর দশকে সরকারের প্রণোদনা এবং কম সুদে ঋণের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানার বিস্তার ঘটেছিল। তবে বর্তমানে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে এবং সরকারি সহায়তাও হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে চিংড়ি উৎপাদন কমে গেছে।
বর্তমানে ১০৯টি নিবন্ধিত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত কারখানার মধ্যে খুলনাতে ৩০টি ও চট্টগ্রামে ১৮টি কারখানা চালু আছে। তবে এসব কারখানা তাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৭% কাঁচামাল পাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনেকে সারা বছর কার্যক্রম চালু রাখতে পারছে না। ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হারও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খাতে প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানি কাজ কৃষি কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হলে কম সুদে ঋণ পাওয়া সম্ভব হতো।
এছাড়া, চিংড়ি চাষের জন্যও ব্যাংক ঋণ পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে অনেক চাষি উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে উৎপাদন চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, চিংড়ি পোনার প্রাপ্যতা কমে যাওয়া এবং চাষ কৌশলে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি না হওয়ার কারণে উৎপাদন কমছে। ভেনামি চিংড়ি চাষে উচ্চ ফলন পাওয়া যায়, কিন্তু বাংলাদেশে সরকার এ চাষের অনুমোদন দেয়নি।
সরকারি সহায়তায় ভেনামি চিংড়ি চাষের প্রসার ঘটানো এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোসহ সুসমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।