বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নারী পাচার: ভয়াবহ বাস্তবতা ও প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা নতুন নয়। সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়লেও পাচারকারীরা প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কাজের প্রলোভন, প্রেমের ফাঁদ, বা জোরপূর্বক পাচার—বিভিন্ন উপায়ে নারীদের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
নারী পাচারের ভয়াবহ চিত্র
যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ও কক্সবাজারসহ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে। পাচার হওয়া নারীদের অনেককে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়, আবার অনেকে গৃহকর্মী বা শ্রমিক হিসেবে নির্যাতনের শিকার হন।
কিছু সাম্প্রতিক ঘটনা:
যশোরের এক নারীকে দুই বছর আগে ভারতে পাচার করে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়েছিল। ভারতীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।
ঢাকার এক কিশোরীকে ‘উচ্চ বেতনে নাচ শেখার’ প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে বিজিবি তাকে উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরার এক নারী সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন।
কোন সীমান্ত দিয়ে পাচার বেশি?
বেশিরভাগ পাচার হয় যশোরের বেনাপোল, পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদীপুর, রুদ্রপুর, ঝিনাইদহের মহেশপুর, ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে। এছাড়া সিলেটের তামাবিল ও কুমিল্লার কিছু সীমান্ত পথও পাচারকারীদের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নারী পাচার প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাচার প্রতিরোধে কাজ করলেও এখনো অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে:
পাচারকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন। ২০২৪ সালে ১,১৩৫টি মামলা হলেও মাত্র ৬০ জন পাচারকারীর সাজা হয়েছে, আর ১,২৫০ জন খালাস পেয়েছে।
সরকারি পর্যায়ে পাচারের নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সংরক্ষণ করা হয় না, যা প্রতিরোধে বড় বাধা।
অনেক সময় পাচার হওয়া নারীরা সামাজিক লজ্জার কারণে বিচার চাইতে ভয় পান।
নারী পাচার প্রতিরোধে করণীয়
সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং পাচার প্রতিরোধে বিজিবি ও বিএসএফ-এর মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় দরকার।
স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে নারী ও শিশু পাচারের ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে হবে।
পাচার হওয়া নারীদের পুনর্বাসন ও মানসিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা জরুরি।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।
নারী পাচার একটি ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য—’অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন’—প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন করতে হলে নারী পাচার প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।