অন্তর্বর্তী প্রশাসনে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের প্রাধান্য!
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এখনো শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বহাল রয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মাঠ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা চারজন জেলা প্রশাসক এখনো হাসিনার আস্থাভাজন।
প্রধান উপদেষ্টার দফতরেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কর্মরত রয়েছেন, যিনি সম্প্রতি যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়েছেন। এ ছাড়া, সচিব পদে পদোন্নতির জন্য জোর তদবির চালাচ্ছেন হাসিনার সুবিধাভোগী একাধিক অতিরিক্ত সচিব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ে হাসিনার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা
সরকারের মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, ১৫তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনি ২০১৭ সালে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা প্রশাসন অনুবিভাগে তার অধীনে যুগ্মসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন ২২তম বিসিএস ব্যাচের মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, যিনি ২০২০ সালে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হন। এর আগে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন।
প্রশাসন অধিশাখার যুগ্মসচিব হিসেবে রয়েছেন মো: নজরুল ইসলাম সরকার (২০তম বিসিএস ব্যাচ)। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এবং পরে যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপমহাপরিচালক হন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে হাসিনার ঘনিষ্ঠরা
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক পদে আছেন বিসিএস গণপূর্ত ক্যাডারের ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা এ কে এম ফজলুর রহমান। তিনি ২০২০ সালে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত থাকায় পদায়ন পান এবং অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরও বহাল রয়েছেন।
এদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সচিব পদ শূন্য থাকায় সেখানে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব মো: তোফাজ্জেল হোসেন (১৫তম বিসিএস ব্যাচ)। তিনি হাসিনার শাসনামলে প্রশাসনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিলেন এবং পদোন্নতির জন্য উপদেষ্টাদের মাধ্যমে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
সচিব পদে পদোন্নতির তদবির চলছে
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালনকারী মফিদুর রহমান (১৫তম বিসিএস ব্যাচ) পদোন্নতির জন্য সরকারের উপদেষ্টাদের মাধ্যমে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তার প্রশাসনিক ক্যারিয়ারে অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন যে, নিরীহ কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী কর্মকর্তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে।