গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পর আর দেশে ফেরা হয়নি সাকিব আল হাসানের। ফলে জাতীয় দলের হয়ে খেলাও বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই ধরে নিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের পথচলা শেষ। তবে সাকিবের দৃষ্টিভঙ্গি একদম আলাদা। তিনি এখনো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়িয়ে খেলতে চান এবং দেশের হয়ে খেলেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান এই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি। জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কবে বুঝেছেন যে আর দেশের হয়ে খেলার সুযোগ নেই? সাকিব বলেন, ‘যখন বুঝলাম এত চাপ সহ্য করে খেলা সম্ভব নয়, তখনই মনে হয়েছে শেষ। তবে এটি এমন নয় যে আমি খেলতে চাই না—আমি এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আগ্রহী, সেই ইচ্ছাটা সব সময় থাকবে। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি।’
সাকিব সর্বশেষ বাংলাদেশ দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে। সেসময় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এবং অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকে বিদায়ের ইচ্ছাও জানান। ওয়ানডেতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।
‘বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা আমার ন্যায্য অধিকার। দেশের বেশিরভাগ মানুষই চায় আমি খেলেই বিদায় নিই এবং আরও কিছুদিন চালিয়ে যাই,’ বলেন সাকিব। তাঁর বিশ্বাস, তিনি অন্তত আরও এক-দুই বছর খেলে যেতে পারবেন।
তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবকে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে দেশে না ফেরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তাই তিনিও দেশে ফেরেননি। তবে মাঠে ফেরা নিয়ে তাঁর আশা এখনো অটুট। সাকিব বলেন, ‘আমি এখন আর সংসদ সদস্য নই, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িতও নই। ১৮-২০ বছর ধরে যে কাজটা করে আসছি, হঠাৎ থেমে যাওয়া কি ঠিক? আমি এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলে ভালোভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই। সুযোগ থাকলে এক বা দুই সিরিজ, এমনকি এক বছর খেলার প্রস্তুতিও নিতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের হয়ে খেলাটাই আমার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এ স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি—খেলাধুলাবিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিসিবি সভাপতির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি।’
বিসিবির ভূমিকা নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘সবাইকে কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়।’ প্রায় দুই দশক ধরে দেশের হয়ে খেলা এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে বিচার করতে চান, তাহলে দেখবেন গত ১৮ বছরের পারফরম্যান্স, না কি কেবল শেষ ছয় মাস?’
সাকিব আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগটা আমার প্রাপ্য। আমি বিশ্বাস করি, বেশিরভাগ মানুষই চায় আমি দেশের হয়ে খেলে বিদায় নিই। আমি এখনো খেলার মতো ফিট এবং বিশ্বাস করি আরও এক-দুই বছর পারফর্ম করতে পারব।’