কাশ্মীরের পেহেলগাম অঞ্চলে সম্প্রতি সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতকে ইসরায়েলের মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশোধমূলক কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল রুবিন। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উচিত ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের মতো দৃঢ় কৌশল অবলম্বন করা।
রুবিন স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদদের ওপর ভয়াবহ হামলার পর ইসরায়েল “অপারেশন র্যাথ অব গড” নামে গোপন অভিযানের মাধ্যমে সারা বিশ্বজুড়ে হামলাকারীদের ধ্বংস করে। মোসাদের এই অভিযানে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে একের পর এক জঙ্গিকে নিঃশব্দে হত্যা করা হয়। রুবিনের মতে, ভারতকেও এমনই দৃঢ় ও নিষ্ঠুর প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’—যা নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তইবার ছায়াতলে পরিচালিত—কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা চালিয়ে ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে হত্যা করে।
এই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ভারত যেকোনো জায়গা থেকে সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে এমনভাবে শাস্তি দেবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। অনেকেই এই বক্তব্যকে ইসরায়েলি নেত্রী গোল্ডা মেয়ারের বিখ্যাত প্রতিজ্ঞার প্রতিধ্বনি মনে করছেন।
রুবিন জানান, ভারত সংযম ও কৌশলের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালু করতে কিছুটা সময় লেগেছে, তবু ভারতের প্রতিক্রিয়া সুপরিকল্পিত এবং প্রমাণসিদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী গত কয়েক মাসে একাধিক পাকিস্তানি হামলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করেছে।
পাকিস্তান সম্পর্কে রুবিন বলেন, তারা একদিকে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার দাবি করে, অন্যদিকে তাদের মৃত্যুর বদলা নেয়ার কথা বলে। যদি পাকিস্তান সত্যিই নির্দোষ হয়, তবে তাদের উচিৎ সব সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং জঙ্গিদের—যদি তারা সামরিক পোশাক পরিহিতও হয়—ভারতের কাছে হস্তান্তর করা।
তিনি সতর্ক করেন, শুধু কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সন্ত্রাস রোধ সম্ভব নয়। বরং এতে জঙ্গিরা পুনর্গঠনের সুযোগ পায়, যার ভয়াবহ উদাহরণ ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে ইসরায়েলে হওয়া হামলা।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের তুলনায় ভারত এখন অনেক বেশি প্রস্তুত এবং কৌশলগতভাবে এগিয়ে। তবে স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ভারতকে আরও কঠোর ও প্রতিশোধমূলক কৌশল গ্রহণ করতে হবে—যা ইসরায়েল বহু বছর ধরে বাস্তবায়ন করে আসছে।