দুর্নীতির মামলায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে নিজের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ডা. দীপু মনি। বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে এ আবেদন জানান তিনি।
ওইদিন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি চলছিল।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, “মাননীয় আদালত, আমি প্রায় ১১ মাস ধরে কারাবন্দি। এই সময়ে পত্রিকায় একটি সংবাদ পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়, আমার নাকি ২৮টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে এবং তাতে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং ভিত্তিহীন।”
তিনি বলেন, “আমি একজন নিয়মিত করদাতা। গত ১৫ বছরের আয়-ব্যয়ের তথ্য আমার আয়কর বিবরণীতে দেওয়া আছে। আমার ছয়টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যার মধ্যে দুটি বহুদিন যাবৎ নিষ্ক্রিয়। বাকি চারটিতে সীমিত পরিসরে লেনদেন হতো। আমি বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের মাধ্যমে এসব হিসাবের লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানতে চাই।”
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, “দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি অভিযোগ জানার অধিকার রাখি। অথচ আমাকে কিছু না জানিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।”
এ সময় দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, আসামি যখন গ্রেপ্তার হবেন, তখন মামলার সব কাগজপত্রের অনুলিপি তার আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি পাবেন। আর তদন্তে প্রাপ্ত সব তথ্যই আদালতের নথিতে রয়েছে।”
ডা. দীপু মনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ৭০টির বেশি মামলা হয়েছে। কিন্তু গত ১১ মাসে আমি মাত্র দুইবার আমার আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছি। এইভাবে আমি আমার আইনি লড়াই চালাতে পারছি না। তথ্য-উপাত্ত ছাড়া আমি দুর্নীতির অভিযোগের জবাব কীভাবে দেব?”
তিনি বলেন, “একজন মানুষের সুনাম তৈরি করতে বছর লেগে যায়, কিন্তু ধ্বংস করতে লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। আমি আমার সম্মান এবং অধিকার ফিরিয়ে পেতে চাই। আমি আইন মেনে লড়াই করতে চাই। তথ্যই আমার শক্তি।”
আদালত তখন বলেন, “আসামি হিসেবে তার সব আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যদি দেখা-সাক্ষাৎ বাধাগ্রস্ত হয়, তবে তা উদ্বেগজনক।”
আলোচনার পর আদালত তাকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
সাড়ে ৪৫ মিনিটের শুনানি শেষে দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে তাকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।
জানাগেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দায়ের হওয়া মামলায় দীপু মনির বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৯২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ২৮টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে তিনি চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলীয় নেতৃত্ব থেকে গা ঢাকা দেন তিনি। ১৯ আগস্ট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।