Wednesday, July 23, 2025
spot_imgspot_img
Homeবিশেষ সংবাদবার্ন ইনস্টিটিউটে কান্না-আশঙ্কায় দিন গুনছে স্বজনেরা, গুরুতর অবস্থায় ৩০

বার্ন ইনস্টিটিউটে কান্না-আশঙ্কায় দিন গুনছে স্বজনেরা, গুরুতর অবস্থায় ৩০


সকালের চেনা ব্যস্ততা নেই—সন্তানকে ঘুম থেকে ডাকা, টিফিন গুছিয়ে দেওয়া কিংবা হোমওয়ার্কের তাড়া। আছে শুধু হাসপাতালের বারান্দায় বসে সন্তানদের পোড়া দেহের আর্তনাদময় শ্বাস, আর নির্ঘুম এক অপেক্ষা।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউ এবং ওয়ার্ডজুড়ে শিশুদের জন্য স্বজনদের কান্না, দুশ্চিন্তা ও অসহায়তা যেন থামছেই না। কেউ মেঝেতে বসে আছেন, কেউ শিশুর পোশাক বুকে চেপে ধরে চোখের পানি ফেলছেন, কেউবা পায়চারি করছেন দিশেহারা হয়ে।

তাদেরই একজন ৭ম শ্রেণির ছাত্র মায়াকের মা সালেহা নাজনীন। মায়াকের শরীরের ৬২ শতাংশ পুড়ে গেছে, তার শ্বাসনালী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে চলছে তার জীবন। ছেলে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই, আর মায়ের চোখে শুধু অঝোর অশ্রু।

সালেহা জানান, দুর্ঘটনার দিন তিনি ছেলেকে আনতে স্কুলের পথে ছিলেন, তখনই জানতে পারেন, একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছুক্ষণ পর মায়াক নিজেই ফোন করে বলে— “মা, আমার শরীর পুড়ে গেছে, আমাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হচ্ছে। তুমি চলে আসো।”

এমন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি শুধু সালেহার নয়। বার্ন ইউনিটে ভর্তি আরও অনেক শিশু মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তাদের মধ্যে নাজিয়া (৯০% দগ্ধ), আরিসন (১০০%), আরিয়ান (৮৫%), শায়ান (৯৫%) ও বাপ্পি (৩৫%) রয়েছেন।

মোট ৪৮ জন এখনও চিকিৎসাধীন, যার মধ্যে ১২ জন আইসিইউতে এবং ৩ জন লাইফ সাপোর্টে। চিকিৎসকদের মতে, ৩০ জন রোগীর অবস্থা এখনো খুবই আশঙ্কাজনক। এছাড়া নতুন করে আরও ২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে—একজন শিক্ষক মাহফুজা বেগম (৩৫% দগ্ধ) এবং শিক্ষার্থী নাভিদ (১২), যার ৫২ শতাংশ শরীর দগ্ধ হয়েছে।

হাসপাতাল চত্বরে শত শত মানুষ অপেক্ষায়। কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ রক্ত দিতে ছুটে যাচ্ছেন। দগ্ধদের সংক্রমণ ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের প্রবেশ সীমিত করেছে।

তবে আশার আলো কিছুটা রয়েছে—জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে থাকা দুইজনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, দশজনের অবস্থা স্থিতিশীল। বাকিদের নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে।
চিকিৎসায় আরও অগ্রগতির লক্ষ্যে দেশের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ও দুইজন নার্স ঢাকায় এসে যোগ দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, দিয়াবাড়ীর এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের।
এই শোক যেন থামার নয়, শুধু অপেক্ষা—আরও কত প্রাণ নিভে যাবে এই ভয়াল অগ্নিকাণ্ডে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments