সাতক্ষীরায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও সেই দিনের ক্ষত এখনও থেকে গেছে। নিহতদের পরিবারকে দুই ধাপে ১৫ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হলেও আহতদের চিকিৎসা খরচ মেটাতে সরকারের সামান্য সহায়তা পর্যাপ্ত হয়নি। ফলে অনেকের চিকিৎসা অসমাপ্ত থেকে গেছে, আর তাদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে বিজয় মিছিলে হামলার ঘটনায় নিহত হন আনাস বিল্লাহ, আদম আলী ও আলম সরদার। ওই হামলায় অন্তত আটজন আহত হন। অভিযোগ রয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী ছাত্রলীগের সদস্যরা মিছিলে অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালায়।
নিহতদের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হলেও আহতদের চিকিৎসা খরচ এখনো সরকারিভাবে পূরণ হয়নি। আহতদের পরিবার দাবি করেছে, সরকার যেন তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
আহত আলী হাসানের ডান পায়ে একসাথে নয়টি গুলি লাগে। বহু চিকিৎসার পর তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। সরকারি সহায়তার অর্থ দিয়ে কেবল ঋণ শোধ করতেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
তার ছোট চাচা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। এত চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব না। সরকার যদি তাদের রক্তে ক্ষমতায় আসে, তাহলে সেই রক্তদাতাদের ভবিষ্যতের দায়িত্বও নিতে হবে।”
আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী খুলনার বিএল কলেজের ছাত্র রফিকুজ্জামান জানান, ঢাকায় আন্দোলন শেষে ৩ আগস্ট নিজ এলাকায় এসে অংশ নেন। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এখনও তিনি গণআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার আশঙ্কা, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে, যা নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে।
সাতক্ষীরা শহরের এক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন জিল্লুর রহমান। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পেট থেকে গুলি বের করতে গিয়ে তিনটি নাড়ি কেটে ফেলতে হয়। তিনি বর্তমানে কোনো ভারী কাজ করতে পারেন না। তার বাবা-মা সরকারের কাছে উন্নত চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের আবেদন জানিয়েছেন।
প্রতাপনগরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিমসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সেইসাথে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ১৯টি মামলা হয়েছে। এই মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া এখনো চলমান।
Top of Form
Bottom of Form