‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পাঠ করা হয়েছে ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেন।
ঘোষণাপত্র পাঠের সময় মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ শাবন্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ রেজাউল করিম, হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতির জোনায়েদ সাকি এবং জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস।
অতিথি সারিতে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আমন্ত্রিত প্রতিনিধি।
ঘোষণাপত্রে ১ থেকে ১৬ নম্বর পয়েন্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের ঘটনাবলির ধারাবাহিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের সারমর্ম:
- বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের সংগ্রামে নেমে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে।
- জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়নে সাম্য, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিল এবং সে লক্ষ্যে ত্যাগ স্বীকার করেছে।
- স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের গঠন ও প্রয়োগে ব্যর্থতা আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতা ডেকে আনে।
- একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়, যার বিরুদ্ধে সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে।
- আশির দশকে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১/১১ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাকে ভেঙে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের ভিত্তি তৈরি হয়।
- সংবিধান পরিবর্তন করে একদলীয় শাসনের পথে ধাবিত হয় সরকার।
- গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়।
- আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এবং দেশকে ফ্যাসিবাদী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়।
- তথাকথিত উন্নয়নের আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক দুর্বস্থার সৃষ্টি হয়।
- সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া নাগরিকেরা জেল-জুলুম, গুম-খুনসহ বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হন।
- বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে জনমত দমন করতে সরকার শক্তি প্রয়োগ করে।
- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়।
- ভিন্নমতের ছাত্র ও তরুণদের নিপীড়ন এবং দলীয় নিয়োগে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
- বিরোধী দলগুলোর ওপর দমন-পীড়নে জনগণের ক্ষোভ তুঙ্গে উঠে এবং বৈধভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যায়।