জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতা সারোয়ার তুষার অভিযোগ করেছেন, সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যেন বর্তমান ইন্টেরিম সরকারকে ‘ডান্ডাবেড়ি’ পরাতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশপ্রাপ্ত সারোয়ার তুষার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য হচ্ছেন এই সরকারের ভেতরের ‘বিভীষণ’— যিনি তার নিজস্ব তত্ত্ব ও মতবাদ দিয়ে ইন্টেরিম সরকারকে সংস্কারের পথ থেকে দূরে রাখতে চাইছেন। তার বৈধতা প্রশ্নকেন্দ্রিক আলোচনাগুলো মূলত সরকারের আত্মবিশ্বাস দুর্বল করে তুলেছে।
তুষার বলেন, দেবপ্রিয় সরকারের উপদেষ্টাদের বার্তা দিচ্ছেন— বেশি উচ্চাশা বাদ দাও, বড় ধরণের সংস্কারে যেও না, কারণ এসব পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বৈধতা পাবে না। এ ধরনের বক্তব্যই এই সরকারকে একধরনের মানসিক আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তার মতে, “পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে যদি সংস্কারগুলোকে অনুমোদন না দেয়?” — এই শঙ্কাই ইন্টেরিম সরকারকে পেছনে টেনে ধরেছে। পরবর্তী পার্লামেন্টকে সন্তুষ্ট না করে সংস্কার করলে, তার কোনো মূল্য থাকবে না— এমন রক্ষণশীল চিন্তা ইন্টেরিম সরকারের অগ্রযাত্রাকে সীমিত করে ফেলেছে।
তুষার আরও বলেন, এই আত্মসমর্পণের মূলে রয়েছে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের ‘বৈধতা-ভিত্তিক’ বিভ্রান্তিকর বয়ান। বাস্তবে এই সরকার চাইলে নিজেই তার পদক্ষেপগুলোকে বৈধতা দিতে পারত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আইনবিদ হ্যান্স কেলসেনের মত অনুযায়ী, ক্ষমতাই বৈধতার উৎস। সামরিক বা গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা অর্জনকারীরা নিজেদের ফরমান দিয়ে নিজেদের বৈধতা ঘোষণা করে। তখন তারা ভবিষ্যতের অনুমোদনের অপেক্ষা করে না।
সারোয়ার তুষার বলেন, সামরিক শাসন যেখানে নিজেই নিজেদের ক্ষমতা বৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে, সেখানে গণঅভ্যুত্থান-উৎপন্ন একটি সরকার কেন তার বৈধতা নিয়ে সন্দিহান থাকবে?
তিনি বলেন, দেবপ্রিয় ও তার সহচররা গণতান্ত্রিক রূপান্তরের চেয়ে স্ট্যাটাস-কো বজায় রাখতে চান। তারা প্রকৃত পরিবর্তনের বদলে নির্বাচনের মাধ্যমে পুরনো কাঠামোর মধ্যেই শুধু মুখ বদল চান। এজন্যই তারা ‘পটপরিবর্তন’ শব্দটি ব্যবহার করে জনগণের আন্দোলনকে ছোট করে দেখাতে চান।
শেষে সারোয়ার তুষার মন্তব্য করেন, মূলত গভীর ও মৌলিক সংস্কারকে আটকে দিতেই এই ‘বৈধতা’ বিতর্ক সামনে আনা হচ্ছে— যাতে সরকার যেন এগোতে না পারে, যেন ক্ষমতার পালাবদলের বাইরে কিছু না ঘটে।