তিন বছর আগে বাহার উদ্দিন বিয়ে করেন কবিতা আক্তারকে। আড়াই বছর আগে স্ত্রীকে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় রেখে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় ভিডিও কলে মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বললেও কোলে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। দেশে ফিরে এসে বিমানবন্দরে মেয়েকে প্রথমবারের মতো কোলে তুলে নিলেও সেটিই হয়ে ওঠে তার শেষ কোলে নেওয়া।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বাহার। সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু বুধবার (৬ আগস্ট) ভোররাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের পাশে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের একটি খালে মাইক্রোবাসটি পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
বাহারের ভাষ্যমতে, চালক রাসেল ঘুমিয়ে পড়লে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে যায়। গাড়িটি সঙ্গে সঙ্গে ডুবে না গেলেও ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় বাহারসহ কয়েকজন যাত্রী জানালা দিয়ে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও অধিকাংশ সদস্য আটকে পড়ে যান।
বাহার বলেন, “বারবার চালককে অনুরোধ করেছি গাড়ি থামিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে, কিন্তু সে শুনেনি। তার ঘুম আমার পুরো পরিবারকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনার পর সে পালিয়ে গেছে, কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি।”
নিহত সাতজন হলেন— বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), কন্যা মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানি ফয়জুন নেছা (৭০), ভাতিজি রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া আক্তার (৮) ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫)।
অসহায় কণ্ঠে বাহার বলেন, “স্ত্রীকে বারবার বলেছিলাম বের হতে, কিন্তু সে মেয়েকে ছাড়া বের হয়নি। মাকেও বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তিনি নানিকে ছাড়েননি। চোখের সামনে একে একে সবাই চলে গেল। কোনো কিছুই করতে পারিনি।”
এই হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনার পর এলাকা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনা কখনো দেখেননি। প্রবাসী বাহার, তার বাবা ও শ্বশুর শোকের ভারে ক্লান্ত, অথচ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষাও খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।
Ask ChatGPT