Sunday, August 10, 2025
spot_imgspot_img
Homeসর্বশেষকাজ শেষের আগেই মধুমতীতে বিলীন ৫০০ কোটি টাকার বাঁধ প্রকল্প

কাজ শেষের আগেই মধুমতীতে বিলীন ৫০০ কোটি টাকার বাঁধ প্রকল্প

৫০০ কোটি টাকার ব্যয়ে মধুমতী নদীর ভাঙন রোধে নির্মিতব্য বাঁধ শেষ হওয়ার আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিশ্রুতি ছিল—এ বাঁধ ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা ও সরকারি স্থাপনাকে রক্ষা করবে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই মধুমতীর তীব্র ভাঙনে ধসে পড়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরআজমপুর ও ছাতিয়ারগাতী এলাকায় তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার অংশ। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শতাধিক নদীতীরবর্তী পরিবার।

গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এবং ছাতিয়ারগাতী আকরাম সাহেবের বাড়ির কাছে জিও ডাম্পিং করা হয়েছিল। কিন্তু সিসি ব্লক বসানোর আগেই নদীতে ভেঙে যাচ্ছে পাকা রাস্তা ও বসতবাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পও।

২০২৩ সালের ৬ জুন একনেক মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাড়ে ৭ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে। এর অংশ হিসেবে চরআজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান, যার কাজের বাজেট ছিল ১২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়, জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হস্তান্তরের আগেই বাঁধ ধসে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ—প্রকল্প নকশা অনুযায়ী অন্তত ৩৫ মিটার গভীর পর্যন্ত কাটিং করে পর্যাপ্ত বালু ভর্তি জিও ব্যাগ বসিয়ে ওপরে সিসি ব্লক দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে লেভেলিং করা হয়নি, জিও ব্যাগে মানসম্মত জিএসএম ব্যবহার করা হয়নি, আর বালুও ছিল অপর্যাপ্ত। ফলে নদীর স্রোতে ব্যাগ ছিঁড়ে পুরো বাঁধ ভেঙে গেছে।

জানা গেছে, প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি ছিল প্রয়াত নৌবাহিনী কর্মকর্তা নকীব হোসেনের নকীব গ্রুপ ও ওয়েস্টার্ন গ্রুপের হাতে। তবে মাঠ পর্যায়ে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি না থাকায় অন্তত ২৩ জন সাব-ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ হয়েছে, যাদের অনেকেই ছিলেন নতুন ও অভিজ্ঞতাহীন। এতে কাজের গতি কম ছিল এবং গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

চরআজমপুরের বাসিন্দা হান্নান শরীফ বলেন, বাঁধ হলে নদীভাঙন থেকে বাঁচতাম ভেবেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই ভেঙে পড়ল, এর মানে কাজটাই নিম্নমানের ছিল।”
স্থানীয় শেফালী বেগম বলেন, দুই মাস আগে ধারদেনা করে ঘর তুলেছি বাঁধের পাশে, এখন বাঁধ নেই—ঘরও যাবে, আমরা কোথায় যাব?”

টগরবন্দ ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য শাহীন শেখ জানান, বাঁধের কাজ এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর হয়নি। দ্রুত মেরামত না করলে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়বে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, অতিরিক্ত স্রোতের কারণে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, পানি কমলে ব্লক বসিয়ে মেরামত করা হবে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঠিকাদারকে ধসে যাওয়া অংশ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি স্থানীয়দের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই প্যাকেজের কাজ অন্যান্য প্যাকেজের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন—স্রোতের ধারা পরিবর্তনের কারণেই বাঁধ ধসে পড়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments