সেন্টমার্টিনে ৯ মাসের পর্যটন নিষেধাজ্ঞা: পরিবেশ রক্ষায় কী অর্জিত হলো?
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকার পর্যটন সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯ মাস সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকলেও, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক রাতযাপন করতে পারবে।
এই নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা, প্লাস্টিক দূষণ কমানো, কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং দ্বীপের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। কিন্তু বাস্তবে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হলো?
পরিবর্তন কী এসেছে?
পর্যটক কমেছে, তবে প্লাস্টিক দূষণ রয়ে গেছে: নিষেধাজ্ঞার ফলে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও, দ্বীপজুড়ে এখনও প্লাস্টিক বর্জ্যের আধিক্য রয়েছে। পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট বিনের ব্যবস্থা না থাকায় বিচ ও সাগরে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস-বিস্কুটের প্যাকেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকছে।
ট্রাভেল পাসের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ: সরকার নির্ধারিত ট্রাভেল পাস ব্যবস্থার মাধ্যমে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি ঠিকমতো কার্যকর হয়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
নিয়মের সীমিত প্রয়োগ: সরকার বারবিকিউ পার্টি ও উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও, কিছু রিসোর্টে এখনও এই কার্যক্রম চলছে।
ছেঁড়াদ্বীপে গোপনে পর্যটন চলমান: যদিও ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটন নিষিদ্ধ, অনেকেই ভোরবেলায় কোস্টগার্ডের নজর এড়িয়ে সেখানে যান।
নিষেধাজ্ঞার ইতিবাচক দিক
পরিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা: পর্যটক কমে যাওয়ায় প্রবাল ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাচ্ছে।
কচ্ছপ ও সামুদ্রিক প্রাণীর সুরক্ষা: কচ্ছপের প্রজননক্ষেত্রে মানুষের হস্তক্ষেপ কমেছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।✅ নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা: পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত করায় ভবিষ্যতে টেকসই পর্যটনের জন্য ভালো নীতিমালা তৈরি করা সহজ হবে।
ভবিষ্যতে করণীয়
দ্বীপের অভ্যন্তরে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে।
পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালু করা দরকার।
প্লাস্টিক ব্যবহারের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে।
পর্যটনের সময়সীমা কমিয়ে পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
সেন্টমার্টিনকে রক্ষার এই উদ্যোগ কেবল সরকার নয়, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত সহযোগিতার মাধ্যমেই সফল হতে পারে।