মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে ঘণ্টাখানেক আগে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয় এবং বেশ কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষ হতেই মাদক বিক্রেতারা আবারও সক্রিয় হয়ে পড়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সেনা সদস্যদের বহনকারী গাড়িগুলোর ইঞ্জিন চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার গলিগুলোতে গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইনের পুঁটলি নিয়ে শুরু হয় মাদক বিক্রির হাঁকডাক। মুহূর্তেই পুরো এলাকা যেন মাদক বিক্রির হাটে পরিণত হয়। এ দৃশ্য দেখা গেছে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের গলিতে।
ক্যাম্পে কয়েক দফা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গত সোমবার শাহ আলম নামে এক মাদক কারবারিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা কঠোর অভিযান শুরু করেন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা অভিযান চলে হুমায়ুন রোডের সাত নম্বর সেক্টরের গলিতে, যা শেষ হওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই মাদক বিক্রি শুরু হয়।
হুমায়ুন রোডের ময়লার গলির সামনে হাতে হাতে মাদক নিয়ে কিশোর বয়সী মাদক কারবারিরা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেখা গেছে। এক ক্রেতা জানায়, গাঁজার দাম আগে ও এখন ভিন্ন; পুলিশের তৎপরতার কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। একই ধরনের দৃশ্য বাবর রোডের মসজিদ গলি ও বোবার বিরিয়ানির দোকানের আশপাশেও লক্ষ্য করা গেছে।
গলিতে একজন ১২-১৩ বছর বয়সী ছেলে পলিথিনভর্তি গাঁজার পুঁটলি নিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছিল। সে বলছিল, ‘২৫ গ্রাম গাঁজা ৯০০ টাকা, ১২.৫ গ্রাম ৪৫০ টাকা, এর কমে বেচি না।’ পাশাপাশি ক্রেতাদের জানাচ্ছিল, ‘পুলিশ যে কোনো সময় আসতে পারে, তাই দ্রুত কেনাকাটা করতে হবে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান জানান, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে, মামলা হলে বিস্তারিত জানানো হবে।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দেওয়া হয়েছে, তবে স্থানীয়দের ভয় ও হিসাব থাকার কারণে অনেকেই মামলা করতে আগ্রহী হন না।
শাহ আলম হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই সন্ত্রাসী ফয়সাল ও সেলিমকে পুলিশ গত সোমবার গ্রেপ্তার করেছে। ওই দিন রাতে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়। বর্তমানে মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে, যার আসামি হিসেবে ২৪ জন মাদক কারবারি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলাটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি আলী ইফতেখার হাসান।