সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি কাগজের মাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে ৫ আগস্ট বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। একই কাগজে বলা হয়েছে, ওই দিন তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন এবং এমিরেটস ফ্লাইট ৫৮৩-এ করে দেশে ফেরার কথা ছিল। কাগজটির তথ্য অনুযায়ী, তিনি ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন।
তবে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ৫ আগস্ট পিটার হাস ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। তিনি তখন বাংলাদেশে আসেননি। এই তথ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো কাগজ এবং তার ভিত্তিতে তৈরি দাবিগুলো সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তিকর।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারকারী যাত্রীদের তালিকা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, এটি পুরোপুরি জাল। কাগজের শুরুতেই অফিসিয়াল নাম ভুলভাবে লেখা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের’ পরিবর্তে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’। এছাড়া যাত্রীদের নামের বানান, পদবী, ফ্লাইটের সময় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও ভুল ছিল। উদাহরণ হিসেবে, মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী নামে একজন কর্মকর্তাকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে দেখানো হলেও তিনি ২০২২ সালের ২২ মে আরেক মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন।
পিটার হাস ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি এক্সালারেট এনার্জি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিলের পর পিটার হাস বাংলাদেশে একবারও যাননি।
এ বিষয়ে এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সেটিও ভিত্তিহীন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবং ওয়াশিংটনের সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পিটার হাস ওই সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো অংশগ্রহণ করেননি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করেছেন, ভাইরাল হওয়া যাত্রী তালিকা সম্পূর্ণ জাল এবং এটি কোনোক্রমেই অফিসিয়াল নয়। এই কাগজ ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যের উদ্দেশ্য হলো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। তবে প্রকৃত তথ্য অনুযায়ী, পিটার হাস ৫ আগস্ট বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলেন না এবং তার সঙ্গে কোনো বৈঠকও হয়নি।
এই ঘটনা দেশের রাজনীতিতে মিথ্যা তথ্য ও গুজবের প্রভাব তুলে ধরে। প্রমাণিত হলো, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিটি তথ্যই বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত নয়। জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাস।