রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় উত্তরপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া একই পরিবারের চারজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। নিহতরা হলেন— মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা বেগম (২৮), ছেলে মাহিন (১৩) ও আঠারো মাস বয়সী মেয়ে মিথিলা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) আসরের নামাজের পর প্রথমে মিনারুল ও ছেলে মাহিনের জানাজা শেষে তাদের নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর মিনারুলের স্ত্রী মনিরা ও শিশু কন্যা মিথিলার জানাজা শেষে রাজশাহী নগরীর টিকাপাড়া গোরস্থানে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।
পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী জানান, শুরুতে চারটি মরদেহ একসঙ্গে দাফনের সিদ্ধান্ত ছিল। এ কারণে চারটি কবর খোঁড়ার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে পারিবারিক জটিলতার কারণে শুধু মিনারুল ও ছেলের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আর স্ত্রী ও মেয়ের মরদেহ শ্বশুরবাড়ির পক্ষ গ্রহণ করে।
মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, “দুই পরিবার আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়, দুইজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আর বাকি দুইজনের মরদেহ শহরে দাফন করা হবে। ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে সে অনুযায়ী মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।”
শনিবার সকালে স্থানীয়রা বাড়ির পাশে কবর খননে ব্যস্ত ছিলেন। প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম বলেন, “এক বাড়ির জন্য এতগুলো কবর খুঁড়তে হয়নি কোনোদিন। চারটা খোঁড়ার কথা ছিল, পরে তিনটা করা হলো। হৃদয়বিদারক দৃশ্য।”
নিহতের চাচা আবু তালেব জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে একসঙ্গে দাফনের ইচ্ছে থাকলেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাজি হয়নি। ফলে দুই জায়গায় আলাদা করে দাফন করতে হয়েছে।
ঘটনার পর নিহতদের মরদেহের সঙ্গে একটি দুই পৃষ্ঠার চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।” পরিবারের ধারণা, ঋণ ও দারিদ্র্যের চাপে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার পর মিনারুল আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে— একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী, আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন মিনারুলের শাশুড়ি। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আসামি করা হয়নি। পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।