Monday, August 18, 2025
spot_imgspot_img
Homeদেশের খবরসাতক্ষীরায় অফ-সিজনের তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ, দ্বিগুণ আয় ও নতুন সম্ভাবনা

সাতক্ষীরায় অফ-সিজনের তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ, দ্বিগুণ আয় ও নতুন সম্ভাবনা

সাতক্ষীরায় স্বল্প খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় অফ-সিজনের (অসময়ের) তরমুজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। মৎস্য ঘেরের বেঁড়ি ও কৃষি জমিতে সবজি চাষের পাশাপাশি মাচা পদ্ধতিতে এই তরমুজ উৎপাদন হচ্ছে। এতে একদিকে জমির বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকের আয় কয়েক গুণ বাড়ছে। পাশাপাশি দেশের বাজারে তরমুজের বাড়তি চাহিদা পূরণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এ চাষ।

বাহ্যিকভাবে হলুদ বা কালো রঙের হলেও ভেতরে টকটকে লাল মিষ্টি ও সুস্বাদু এই তরমুজ বাজারে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অসময়ের এই তরমুজ চাষ হচ্ছে। দাম কিছুটা বেশি হলেও বাম্পার ফলন এবং কম খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় কৃষকরা এই চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৬ হেক্টর জমিতে অফ-সিজনের তরমুজ আবাদ হয়েছে। দেবহাটা উপজেলা কৃষি দফতর জানায়, এ বছর প্রায় ৫০ জন কৃষককে উন্নত জাতের বীজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম হানি (হলুদ), তৃপ্তি (হলুদ), ব্ল্যাক বেবি (কালো), সুগারকুইন ও বাংলা লিংক জাতের তরমুজ।

এই চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। মাছের ঘেরের বেঁড়ি বা পতিত জমি ব্যবহার করে সহজেই এ ফসল ফলানো যায়। অল্প সময়ে বিক্রি উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছর চাষের পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর উপজেলার তিনটি প্রদর্শনী খামারে ইতোমধ্যে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১০০-১২০ গ্রাম বীজ রোপণ করা যায়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।

দেবহাটার টিকেট গ্রামের কৃষক বিশ্বনাথ টাপালী জানান, জুন মাসের শেষের দিকে তিনি প্রথমবারের মতো ৫ বিঘা জমির মৎস্য ঘেরের বেঁড়িতে হলুদ তরমুজ চাষ করেন। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, কীটনাশক ও মাচা তৈরির জন্য অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকা, অথচ ইতোমধ্যেই এক লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এখনও দুই দফায় ফলন তোলা বাকি আছে। আশা করছেন, চাষ থেকে সারাবছরের জমির হারির খরচ উঠে আসবে।

একই গ্রামের যুবক কৃষক আবুল কাশেম (৩৫) জানান, তিনি ৪০ বিঘা জমির ঘেরের বেঁড়িতে তরমুজ চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা, অথচ ইতোমধ্যেই দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। তিনি আরো দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রির আশায় আছেন। কাশেম বলেন, “এই তরমুজ দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও অনেক মিষ্টি। বাজারে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।”

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান বলেন, “প্রথমে কৃষকরা খুব একটা আগ্রহ দেখাননি। তবে অল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ায় এখন ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টায় মৎস্য ঘেরের বেঁড়ি ও পতিত জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।” তিনি আরো জানান, মাত্র দুই মাসেই এই তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয় এবং সাতক্ষীরার মাটি তরমুজ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, এবার জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৬ হেক্টর জমিতে অফ-সিজনের তরমুজ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৪ হেক্টর বেশি। তিনি বলেন, “এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষে খরচ হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা, অথচ বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো। এ কারণে চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments