ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবিত সীমানা পুনর্বিন্যাসকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। অনেকেই এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রোববার ইসিতে প্রথম দিনের শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সামনেই দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কমিশন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
এর আগে ৩০ জুলাই ইসি নতুন খসড়া প্রকাশ করে জানায়, ৩৯টি আসনে সীমান্তে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে মোট ছয়টি করা হয় এবং বাগেরহাটের একটি আসন কমে তিনটিতে নেমে আসে। ঢাকার ছয়টি আসনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়া প্রকাশের পর থেকেই উল্লাসের পাশাপাশি ক্ষোভও দেখা দেয় বিভিন্ন স্থানে।
খসড়ার পর ১০ আগস্ট পর্যন্ত দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ ছিল। এ সময় ৮৩টি আসন নিয়ে মোট ১ হাজার ৭৬০টি আবেদন পড়ে। গতকাল থেকে শুনানি শুরু হলে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে শুনানি শুরু হয়। বিএনপির রুমিন ফারহানা খসড়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অপরদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন আইনজীবী খসড়ার বিরোধিতা করে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করার সমালোচনা করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধাক্কাধাক্কি হয়।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, “আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজের চেষ্টা করেছি। দাবি-আপত্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
শুনানি চলাকালে নির্বাচন ভবনের বাইরে বিক্ষোভ হয়। পুলিশ গেটের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় এবং জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়।
এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের রুমিন ফারহানা অভিযোগ করে বলেন, “১৫ বছরে যা হয়নি, আজ সেটাই হলো। বিএনপির জন্য লড়াই করেছি, অথচ তারাই আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।” অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব বলেন, “এটি দুঃখজনক হলেও প্রতিপক্ষ ভুল তথ্য দিয়েছে। বিজয়নগরের ইউনিয়নগুলো সদরেই থাকা উচিত।”
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ অভিযোগ করেন, তাকে রুমিন ফারহানা ধাক্কা দেন এবং তার লোকজন মারধর করে। তিনি বলেন, “আমাকে যেভাবে ছাত্রলীগ পিষত, সেভাবে পিষেছে।” তবে রুমিন পাল্টা দাবি করে বলেন, “প্রথমে আমাকেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, আমার লোকজন পরে প্রতিউত্তর দিয়েছে।”
এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, “এ ঘটনা প্রমাণ করেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ভোটকেন্দ্র দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
অন্যদিকে বিভিন্ন জেলায়ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে হরতাল ও সড়ক অবরোধ হয়। এতে জেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। যশোরে কেশবপুর উপজেলা বিএনপি নির্বাচন অফিস ঘেরাও করে এবং আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানায়।