মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারে না। কারও স্বপ্ন ধন-সম্পদ অর্জন, কারও স্বপ্ন খ্যাতি, আবার কারও স্বপ্ন ভালোবাসা পাওয়া। কিন্তু একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো আল্লাহর ঘর কাবা শরিফকে দেখা, বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা এবং মদিনার সবুজ গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে প্রিয় নবীজি (সা.)-কে সালাম জানানো। এই আকাঙ্ক্ষাই তার জীবনের অনুপ্রেরণা, বুকের আশা ও মনের শক্তি। কারও জীবনে এ স্বপ্ন পূরণ হয় জীবনের শুরুতেই, কারও হয় জীবনের অন্তিম প্রহরে। অনেকের জীবনে বারবার এই সৌভাগ্য আসে, আবার কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
এই গভীর আবেগ ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকেই কাবা ও কেবলা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিশেষ সংবেদনশীলতা রয়েছে। সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে একটি প্রশ্ন— কেবলার দিকে পা বাড়ানো কি গোনাহের কাজ? এ নিয়ে ভিন্নমত পাওয়া যাচ্ছে। কেউ একে হারাম বলছেন, আবার কেউ বলছেন এতে কোনো দোষ নেই। বিশেষ করে পশ্চিমমুখী হয়ে পা ছড়িয়ে বসা বা শোয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষজ্ঞ আলেমরা বলেন, সম্মান প্রদর্শন বিষয়টি আপেক্ষিক। কোনো সমাজে যেটি সম্মান হিসেবে ধরা হয়, অন্য সমাজে সেটিকে অসম্মান হিসেবে দেখা হতে পারে। তাই যে সমাজে কারও দিকে পা বাড়ানো অসম্মানজনক ধরা হয়, সে সমাজে অবশ্যই কাবার দিকে পা বাড়ানোও অনুচিত হবে। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্মান দেখানোর মানসে কেউ কাবার দিকে পা ছড়ালে তা গুরুতর অপরাধ এবং কুফরির কাছাকাছি কাজ বলে গণ্য হবে।
তবে কোরআন-হাদিসে সরাসরি পশ্চিম দিকে পা বাড়ানোকে হারাম বলা হয়নি। তাই একে সরাসরি হারাম বলা যাবে না। কিন্তু আল্লাহর কাবা তাঁর অন্যতম নিদর্শন হওয়ায় এটিকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা মুসলমানদের জন্য ফরজ। কোরআনে বলা হয়েছে— “আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান প্রদর্শন করল, তা তার অন্তরের তাকওয়ার নিদর্শন।” (সুরা হজ : ৩২)
মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনীর মত
রাজধানীর জামিয়াতুল ইসলামিয়া বায়তুস সালামের ফতোয়া বিভাগের প্রধান মুফতি আব্দুর রহমান হোসাইনী বলেন, অকারণে কেবলার দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পা বাড়ানো মাকরুহে তাহরিমি এবং গোনাহের কাজ। এমনকি আলেমদের মতে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কাবার দিকে পা ছড়িয়ে বসবে তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে বা উদাসীনতার কারণে এমনটি ঘটে, তাহলে গোনাহ হবে না। যদিও এটিকে আদবের পরিপন্থী কাজ বলা হবে।
শায়খ আহমাদুল্লাহর মত
প্রখ্যাত আলেম শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কেবলার দিকে পা বাড়িয়ে বসা বা শোয়া হানাফি মাজহাবের দৃষ্টিতে মাকরুহ ও অনুচিত। নবীজি (সা.) কেবলার দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছিলেন, সেটি কেবল সম্মান রক্ষার কারণে। তাই কাবার দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পা ছড়িয়ে বসা বাহ্যিকভাবে অসম্মানের প্রকাশ।
তবে সৌদি আলেমদের মতে, এতে কোনো দোষ নেই, কারণ কোরআন-হাদিসে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই।
উপসংহার
শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, যেহেতু এটি ইজতিহাদি বিষয়, তাই সতর্কতার খাতিরে কেবলার দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পা না বাড়ানোই উত্তম ও নিরাপদ।