গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে চলে যান। এর ফলে ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার মসনদ হারায়। ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও এরপর থেকেই আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
সম্প্রতি দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন ব্যাংকের তহবিল লুট ও জনগণের অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়।
সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও ক্ষমতায় ফেরার জন্য ২৫০০ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে, আর আরও দুই হাজার কোটি টাকা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়। পবিত্র উমরাহ পালনের আড়ালে সাইফুল আলম মাসুদ মক্কায় গিয়েছিলেন মূলত দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে। মক্কার ফেয়ারমন্ট হোটেলে তিনি পলাতক নেতাদের সঙ্গে দেশে এবং বিদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা আলোচনা করেন।
মক্কা থেকে ৪ আগস্ট তিনি মদিনায় যান এবং ‘ইলাফ আল তাকওয়া’ হোটেলে উঠেন, যেখানে চট্টগ্রামের কিছু চিহ্নিত আওয়ামী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দিন মদিনায় অবস্থান শেষে ৬ আগস্ট তিনি দুবাই হয়ে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তাদের ছোট ছেলে এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন চেয়ারম্যান। দিল্লিতে তারা পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরেইয়ে অবস্থান শুরু করেন, যেখানে এস আলমের মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে গোপন বৈঠক।
৮ আগস্ট দুপুরে নম্বরপ্লেটহীন গাড়িতে তাকে হাসিনার বাসভবনে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারতের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চার হাজার পাঁচশত কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা হবে:
- আন্তর্জাতিক লবি ও বিভিন্ন দেশের পলিসি মেকারদের আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা।
- নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দেশজুড়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা।
- সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রভাবিত করা।
- আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিনের জন্য অর্থ ব্যয় করা।
- এস আলমের সুগার রিফাইনারিসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠন করা।
এ অর্থ গ্রহণ, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা তিনজনের কমিটি গঠিত হয়েছে—জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।