Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়এপিআই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কর ছাড়, নগদ প্রণোদনা এবং স্বল্প সুদের ঋণ...

এপিআই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কর ছাড়, নগদ প্রণোদনা এবং স্বল্প সুদের ঋণ প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশে এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্ট) উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে কর ও ভ্যাটে ছাড়, নগদ প্রণোদনা এবং স্বল্প সুদের ঋণ প্রদানের কথা। এর মাধ্যমে সরকার আশা করছে যে, দেশীয় এপিআই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে, দেশীয় ওষুধ শিল্পকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। এ পদক্ষেপটি কেবল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নয়, দেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

বর্তমানে, বাংলাদেশ এপিআইয়ের জন্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিদেশে ব্যয় করে। দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ এপিআই আমদানি করা হয়। এ কারণে দেশীয় এপিআই উৎপাদন বাড়ানো হলে বছরে ১০০ কোটি ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, এই উদ্যোগ দেশের জনগণের কাছে সুলভমূল্যে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

এপিআই উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে বড় একটি কারণ হচ্ছে, বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেটের অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের ঝুঁকি। যেহেতু এই খাতের প্রায় সব কাঁচামাল ভারত বা চীন থেকে আমদানি করা হয়, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পরিবর্তন হলে সেগুলোর দাম বাড়লে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনের খরচও বাড়বে। যদি বাংলাদেশ নিজেই এপিআই উৎপাদন শুরু করতে পারে, তাহলে দেশী ওষুধ শিল্প অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং লাভজনক হতে পারে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে জানা গেছে যে, ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি, বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ক একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরকার এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট নীতিগত সহায়তা এবং প্রণোদনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে। এই বিষয়ে আরো আলোচনা ও পর্যালোচনার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায় যাতে উদ্যোক্তারা শিগগিরই বিনিয়োগ করতে সক্ষম হন।

বাংলাদেশে এপিআই শিল্পে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে দেশটির গার্হস্থ্য উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা যদি বিদেশ থেকে এপিআই উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ করতে সক্ষম হন, তবে ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হবে। তবে, স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো, প্রণোদনা এবং কর ছাড় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তারা এমন একটি পরিবেশ চান যেখানে তাদের বিনিয়োগে স্বস্তি থাকবে এবং তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারবেন।

এপিআই উৎপাদনে সরকারের গৃহীত নীতিমালা ইতোমধ্যে কিছু সাফল্য দেখিয়েছে, কিন্তু বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ২০১৮ সালে সরকার এপিআই খাতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে, যার আওতায় ২০৩২ সাল পর্যন্ত আয়কর রেয়াতের সুবিধা দেওয়া হয়। তবে, এই সুবিধা নিতে উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বছরে পাঁচটির কম এপিআই উৎপাদন করে, তবে তারা কর ছাড় পাবে না। এতে অনেক উদ্যোক্তা নীতির বাইরে চলে যেতে পারেন।

এ ছাড়াও, ২০১৮ সালের নীতিমালায় এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কিছু শর্ত যোগ করেছে, যা উদ্যোক্তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, এপিআই খাতে ব্যবসা করার জন্য উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব বাধা দূর করতে সরকারের উচিত শর্তহীন সুবিধা প্রদান করা এবং কাঁচামাল আমদানির উপর ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা দেওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, “বাংলাদেশে এপিআই শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা প্রয়োজন। যদি সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা, যেমন ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফ, ট্যাক্স সুবিধা এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়, তবে এপিআই খাত দ্রুত উন্নতি করতে পারবে।”

এছাড়া, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন জানিয়েছেন, “এপিআই খাতের উন্নয়ন দেশের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি দেশীয় কাঁচামাল উৎপাদন করা যায়, তবে বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমবে এবং বাজারে মূল্য স্থিতিশীল থাকবে।”

এভাবে সরকারের নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে এপিআই খাতের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিশেষত, এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো খুবই জরুরি। সরকারের সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আরও শক্তিশালী ও টেকসই হবে এবং দেশের জনগণ লাভবান হবে

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments