বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা, প্রায় অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে সেবা দিয়ে আসছে, তবে বহু বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবহন সেবা দিয়ে টিকে রয়েছে, কিন্তু সেবার মানে দুর্বলতা এবং অপ্রতুলতা এই সংস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পিছিয়ে ফেলেছে। এর ফলে, বিমানকে আধুনিক মানে উপযোগী করা এবং এর সেবা কার্যক্রমের উন্নতি সাধনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব উঠেছে।
সরকারি অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স, যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য হচ্ছে বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা, প্রস্তাব করেছে যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অর্ধেক সম্পদ ব্যবহার করে নতুন একটি আকাশ পরিবহন সংস্থা গঠন করা হোক। নতুন সংস্থার নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এই নতুন এয়ারলাইনস কোম্পানি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে এবং বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা কোম্পানি দ্বারা চালিত হবে। একই সময়ে, বিমান বিলুপ্ত হবে না এবং উভয় সংস্থা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে কার্যক্রম চালাতে থাকবে। যদি কোন এক সংস্থা প্রত্যাশিত সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সেবা প্রদানকারীর মান বৃদ্ধি করতে হলে বিমানের জন্য স্পষ্ট এবং পরিমাপযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে বিমানের সেবা খাত উন্নত করা সম্ভব হয়নি, এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশের জনগণ উন্নত ও আধুনিক আকাশ পরিবহন সেবা পাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশী ব্যবসায়ীরা দেশে এসে মুনাফা অর্জন করলেও, বিমান সেই সুযোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, “বাংলাদেশের জনগণ উন্নত আকাশ পরিবহন সেবা পাওয়ার অধিকারী, কিন্তু বিমান সেই সেবা দিতে পারছে না।” তিনি আরও বলেন, নতুন এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠা একান্ত সময়ের দাবি এবং তার মতে, সবার জন্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় এই সংস্থা পরিচালিত হবে।
এছাড়া, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সাফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এখনও টাস্কফোর্সের সুপারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না, তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা সাধ্যমতো উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিমানের মুনাফা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও, প্রতিষ্ঠানটি এখনও বিপুল পরিমাণ দেনায় ডুবে রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। এই দেনার বেশিরভাগ অংশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে।
শেষে, বিমান বাংলাদেশের উন্নতির জন্য সরকার যদি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত থাকবে। এই প্রস্তাবিত নতুন আকাশ পরিবহন সংস্থাটি নিশ্চিতভাবে দেশের আকাশ পরিবহন খাতের ভবিষ্যৎ উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে