দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ পথ খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক আজ মারাত্মক বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছেছে। পাঁচ বছর আগে ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন করে নির্মাণ হওয়া এই সড়কটি এতটাই নষ্ট হয়েছে যে, স্থানীয়রা এখন এটিকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বলে অভিহিত করছেন। গত এক বছরে এ মহাসড়কে ৫৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে অন্তত ৩৩ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন, অনেকেই নারী ও শিশু।
সোমবার সকাল ৯টায় ডুমুরিয়ার ঝিলেরডাঙ্গা এলাকায় পিকআপ ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু ঘটে। নিহতরা হলেন মিনা খাতুন (৩৬), মোহাম্মদ রুস্তম আলী খান (৬৫) এবং চালক মোহাম্মদ জাহিদুর মোড়ল (২৫)। আহত আরও চারজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও জুলাই মাসে মহাসড়কে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সালে জিরো পয়েন্ট থেকে সুহাশিনী বাজার পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই সড়কটি বেহাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে জিরো পয়েন্ট থেকে কৈয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও বিটুমিন উঠে গেছে, কোথাও পিচ সরিয়ে ঢিবি তৈরি হয়েছে, আবার কোথাও সড়ক ধসে গেছে।
স্থানীয়রা কাজের মান নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। খুলনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, “শুরুর থেকেই সড়কের নির্মাণ মান নিয়ে অভিযোগ ছিল। কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত সড়ক মাত্র পাঁচ বছরে অচল হয়ে পড়া জনস্বার্থের প্রতি চরম অবহেলা ও দুর্নীতির প্রমাণ।”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক জানান, যান চলাচলের অতিরিক্ত চাপের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এই মহাসড়ক কেবল একটি রাস্তা নয়, এটি অঞ্চলের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা ও মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এখন সৎ উদ্যোগ, স্বচ্ছতা এবং জরুরি সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে জীবনের পথ হিসেবে রক্ষা করার প্রয়োজন।