Saturday, April 19, 2025
spot_imgspot_img
Homeজাতীয়ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায়, সমাধানের জন্য উপায় খুঁজছে নির্বাচন...

ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায়, সমাধানের জন্য উপায় খুঁজছে নির্বাচন কমিশন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে, তাদের জন্য ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন এবং নাগরিক সনদ প্রদান করতে ইসি গত কয়েক বছর ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে সাতটি দেশে প্রবাসীদের ভোটার করার কার্যক্রম চলছে। তবে, সম্প্রতি আরও ৪০টি দেশের তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও ভোট প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে এবং এজন্য নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আইন সংশোধনসহ প্রবাসীদের জন্য উপযুক্ত ভোটিং পদ্ধতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের ভোট যেভাবেই নেওয়া হোক না কেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধন না করলে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনি বাধাগুলি দূর করার পাশাপাশি ভোট গ্রহণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে কিছু সম্ভাব্য পদ্ধতি খতিয়ে দেখছে। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে পোস্টাল ব্যালট, প্রক্সি ভোটিং এবং অনলাইন ভোটিং। যদিও, পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি খুবই সময়সাপেক্ষ এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। অন্যদিকে, প্রক্সি ভোটিং পদ্ধতি অনেক দেশে কার্যকরী হলেও এটি আমাদের দেশে সহজে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে। অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি, যা বর্তমানে বেশ কিছু দেশে চলছে, বিশেষভাবে প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং সাইবার সিকিউরিটির ঝুঁকি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।

এ বিষয়ে ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দুটি প্রধান পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে—পোস্টাল ব্যালট এবং অনলাইন ভোটিং। নির্বাচনী কমিশনের সদস্যরা এই পদ্ধতিগুলির বৈধতা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন, তবে এর কার্যকারিতা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার জন্য প্রবাসীদের ভোটার এলাকা এবং ভোট নম্বর সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

অন্যদিকে, অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে, তবে এর নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়ে সম্প্রতি গঠিত ইসির কমিটি জানায় যে, অনলাইন ভোটিং পদ্ধতিটি নিরাপদভাবে কার্যকর করতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। এই প্রযুক্তি ভোটের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। ইতোমধ্যে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিছু দেশে পরীক্ষামূলকভাবে ভোট নেয়া হয়েছে এবং সেগুলোর ফলাফল সন্তোষজনক হয়েছে। তাই, ইসি এই প্রযুক্তি নিয়ে আরও গবেষণা এবং পরীক্ষামূলক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইতালি, এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে, এসব দেশের ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়া তেমন বড় পরিসরে চলছে না, বরং এটি পর্যায়ক্রমে ছোট আকারে হচ্ছে। ইসি জানায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি দেশে ১৪ হাজার প্রবাসী ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কিছু প্রবাসীর হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রও পৌঁছেছে। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকারের প্রশ্নে ইসি ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং ভোটিং পদ্ধতি বিশ্লেষণ করছে। যেমন, তুরস্কে সম্প্রতি প্রবাসীরা ভোট দিয়েছেন এবং তাদের ভোট গ্রহণ পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য একটি রোল মডেল হতে পারে। এজন্য, কূটনৈতিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে সাইবার সিকিউরিটি এবং আন্তর্জাতিক সময়ের পার্থক্য বিবেচনায় রাখতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি সময়সাপেক্ষ এবং কার্যকরী দেখা যায়নি। তাই, নতুন প্রযুক্তি না যুক্ত করলে এই পদ্ধতিতে কার্যকারিতা পাওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম চালু করা হলে ই-ভোটের মাধ্যমে সহজে ভোট নেয়া সম্ভব হবে, তবে আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রাইভেট সিস্টেমের অধীনে হওয়ায় সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।”

এর পাশাপাশি, ইসির এনআইডি শাখার মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, “প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক। আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং আলোচনা করে যাচ্ছি, যাতে আগামী নির্বাচন থেকে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করা যায়।”

এদিকে, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত ঘোষণা করেছিল, কিন্তু দীর্ঘ ২৬ বছরেও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচনী কমিশন আশা করছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনেই প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

মোটের ওপর, প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, নির্বাচন কমিশন এবং সরকার তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে, নতুন প্রযুক্তি এবং আইনগত পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments