বাংলাদেশি রোগী কমায় সংকটে কলকাতার হাসপাতাল, চিকিৎসা পর্যটনে ধাক্কা
এক সময় বাংলাদেশি রোগীদের ভিড়ে গমগম করত দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালসহ ইএম বাইপাসের বিভিন্ন হাসপাতাল। কিন্তু এখন চিত্র একেবারে ভিন্ন। হাসপাতালের লবি, বাইরের দোকান, গেস্ট হাউস—সব জায়গায় সুনসান নীরবতা। বাংলাদেশি রোগীদের অভাবে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।
বাংলাদেশি রোগী কমার কারণ
কলকাতার হাসপাতালগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, আগে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা থেকে মাসে প্রায় ২০-২৫ কোটি রুপি আয় হতো। কিন্তু জুলাইয়ের পর থেকে তা কমে আগস্টে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
ক্ষমতার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
ভারতীয় ভিসা জটিলতা ও কড়াকড়ি বৃদ্ধি
নতুন মেডিকেল ভিসা ইস্যু বন্ধ
নিরাপত্তাজনিত কারণে বাংলাদেশিদের ভারত ভ্রমণে অনীহা
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ও বিকল্প সুবিধা বৃদ্ধি
বাংলাদেশি রোগীদের হারিয়ে লোকসানে হাসপাতাল
কলকাতার হাসপাতালগুলো মূলত নগদ অর্থে চিকিৎসা গ্রহণকারী বাংলাদেশি রোগীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন নতুন রোগী নেই, অস্ত্রোপচারও প্রায় বন্ধ।
রুবি জেনারেল হাসপাতাল: আগে দিনে ৩০-৩৫ জন বাংলাদেশি রোগী আসতেন, এখন একেবারেই নেই।
আর এন টেগোর হাসপাতাল: বহির্বিভাগে দিনে ১৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি রোগী আসতেন, এখন সংখ্যা শূন্য।
মণিপাল গ্রুপের ৪টি হাসপাতাল: আগে মাসে ২৩০০-২৪০০ বাংলাদেশি রোগী আসত, এখন ইনডোর বিভাগেও কোনো বাংলাদেশি নেই।
একজন নিউরোসার্জন জানান, “বাংলাদেশি রোগীরা নগদে চিকিৎসার খরচ মেটাতেন। তাদের অনুপস্থিতির কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ, চিকিৎসকদের আয়েও প্রভাব পড়ছে।”
চিকিৎসা পর্যটনে বড় ধাক্কা
কলকাতা শুধু হাসপাতাল নয়, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওষুধের দোকানসহ চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বাংলাদেশি রোগীদের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনস’ (ICRIER) জানায়, ভারতে চিকিৎসা পর্যটনে বাংলাদেশি রোগীদের অংশগ্রহণ ৬৯%, যা বর্তমানে প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
ভবিষ্যৎ কী বলছে?
ভারতের চিকিৎসা পর্যটনের এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বিভিন্ন দেশ থেকে রোগী টানার পরিকল্পনা করছে হাসপাতালগুলো। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির কারণে ভবিষ্যতে কলকাতার ওপর নির্ভরতা আরও কমবে।