দুনিয়ার মোহে যারা আল্লাহ ও পরকালের কথা ভুলে যায় এবং দুনিয়াকেই একমাত্র লক্ষ্য বানায়, তাদেরকেই দুনিয়াদার বলা হয়। এরা ক্ষণস্থায়ী জীবনে ডুবে থাকে, কিন্তু আখেরাতের কোনো চিন্তা করে না, প্রস্তুতিও নেয় না।
প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, “বৃদ্ধ হলেও মানুষের অন্তরে দুটি জিনিসের আকর্ষণ যুবকের মতোই থেকে যায়—দুনিয়ার মোহ আর সম্পদের লোভ।” (মুসলিম)
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, “আদমসন্তান বৃদ্ধ হয়, কিন্তু ধন-সম্পদ আর দুনিয়ার প্রতি তার লোভ তরুণ থেকে যায়।” (বুখারি, হাদিস : ৬৪২১)
এ কারণেই দুনিয়ার গোলামী থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, “অর্থের দাস ধ্বংস হোক, সম্পদের দাস ধ্বংস হোক, পোশাকের দাস ধ্বংস হোক…” (বুখারি)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াদারদের পরিণতি বর্ণনা করে বলেন—
اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا وَ رَضُوۡا بِالۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ اطۡمَاَنُّوۡا بِهَا وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنۡ اٰیٰتِنَا غٰفِلُوۡنَ ۙاُولٰٓئِكَ مَاۡوٰىهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ
“যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা করে না, দুনিয়ার জীবনেই সন্তুষ্ট থাকে এবং আমার নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়—তাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম, তাদেরই কর্মফলের কারণে।” (সুরা ইউনুস : ৭-৮)
এই আয়াতে জাহান্নামীদের চারটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে—
১. আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে না এবং বিশ্বাসও করে না।
২. আখেরাতকে ভুলে গিয়ে শুধু দুনিয়ার জীবন নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকে।
৩. এভাবে বসবাস করে যেন পৃথিবীতেই তারা চিরস্থায়ী। মৃত্যুর অনিবার্য সত্য তাদের মনে পড়ে না।
৪. আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনগুলো তারা অবহেলা করে, ফলে কোরআন, সৃষ্টি ও নিজের অস্তিত্ব থেকেও কোনো শিক্ষা নেয় না।
ফলস্বরূপ, কুফর, শিরক ও গোনাহর মাধ্যমে তারা নিজেরাই জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যায়।
তাফসিরকার কাতাদা (রহ.) বলেছেন, “দুনিয়াদারদের দেখবে—তারা দুনিয়ার জন্যই খুশি হয়, দুনিয়ার জন্যই দুঃখ পায়, দুনিয়ার কারণেই অসন্তুষ্ট হয়, আর দুনিয়ার কারণেই সন্তুষ্ট হয়।”